রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মী কর্তৃক মা-মেয়েকে খুনের ঘটনায় স্বামীসহ গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই হাজার টাকা চুরির জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।এই হত্যাকাণ্ডের শুরুতে গৃহকর্মী আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও তাকে গ্রেপ্তারে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে।
তার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত ছিল না ওই বাসায়। বোরকা পরে বা মুখ ঢেকে যাওয়া-আসা করায় সিসিটিভির ফুটেজেও তাকে চেনার মতো কোনো স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল পাওয়া যায়নি. নজরুল ইসলাম জানান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার আশপাশে কোনো ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ উপায়ে থানায় গত এক বছরের গৃহকর্মীর মাধ্যমে সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে পুলিশ। নিহত আফরোজার স্বামীর বর্ণনা অনুসারে তদন্তকারীরা বিশেষভাবে লক্ষ করেন, গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বসবাস ও গৃহকর্মীর পরিচয়ে সংঘটিত পূর্বের চুরির তথ্য।
পুরনো তথ্য ঘেঁটে হুমায়ুন রোডের একটি ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ থেকে একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়, সেখান থেকেই শুরু হয় আসামির সন্ধান।কল রেকর্ড বিশ্লেষণে পাওয়া অবস্থান ধরে হেমায়েতপুরে গিয়ে জানা যায়, নম্বরটি ব্যবহার করতেন রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। তদন্তে বেরিয়ে আসে, রাব্বির স্ত্রী আয়েশা। তারা আগে জেনেভা ক্যাম্পে থাকতেন।এরপর হেমায়েতপুরে তারা যে বাসায় থাকতেন, সেটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে রাব্বির পরিবারের অন্য সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সর্বশেষ, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আয়েশার কাছ থেকে একটি চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন ওই বাসা থেকে ২ হাজার টাকা চুরি করেন আয়েশা। তৃতীয় দিন সেই টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্ক হয়।
চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় যান আয়েশা। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তর্ক হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে আফরোজা তার স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পেছন থেকে ছুরি মারে আয়েশা। এই সময়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন ঘাতক গৃহকর্মী।
মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের মূল তার ছিঁড়ে ফেলেন।ডিএমপির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ঘটনার পর নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করেন আয়েশা। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেসে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এই সময়ে ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ ও ফোন নিয়ে যান। পরে ঢাকা ছাড়ার সময়ে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন এবং পোশাক ভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেন।’এ ঘটনায় আয়েশার স্বামী রাব্বীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, স্বামী রাব্বী হত্যাকাণ্ডের পরে আয়েশাকে ঢাকা থেকে পালাতে সাহায্য করে।
গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে লায়লা ফিরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জোড়া হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম।
Mytv Online